আমরা যাঁরা কবি-সাহিতিক, আমরা মানুষের প্রেম ভালোবাসার কথা লিখি। অনেক কথা বলি, কিন্তু বাংলাদেশের বৃহত্তর একটি অংশ যাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন, কষ্টে অবহেলায় অনাদরে আছেন তাঁদের কথা অনেক লেখক বলেন না। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এই বইতে সেই কঠিন কাহিনী তুলে ধরেছেন খুবই যত্নের সহিত।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ইং ‘কলম একাডেমি লন্ডন’ কর্তৃক আয়োজিত চট্টগ্রামের বইমেলায়, কলমের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
ধন্যবাদ সম্মানিত লেখক জাতিকে মূল্যবান ‘সাহিত্যসম্পদ’ উপহার দেবার জন্য।
নিচের অংশটুকু এই বইয়ের জন্য আমার লেখা শুভেচ্ছা বাণী।
নামের মত সত্য যে জন,
সৃষ্টির অমোঘ বিধান এই যে, কিছু মানুষের নাম তার চরিত্র ও পারিবারিক ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়।
এই বইয়ের লেখক ফরহাদ হুসাইন সে ঐতিহ্যিক সরণির স্বারক যেন। তাঁর শিক্ষায় চরিত্রে সর্বোপরি কলমে মিশে আছে খুলনার আধ্যাত্মিক আবহ।
হিতাকাঙ্খী, সুখি, সমৃদ্ধ, স্বর্গীয় পবিত্র চিন্তার অধিকারী, ধর্মীয় চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক মহৎ তাৎপর্যের অধিকারী যে জন আরবিতে তাকে ফরহাদ বলে। এই সকল গুণাবলী এই বইয়ের লেখক ফরহাদ হুসেইনের মধ্যে আছে। তিনি নামের মত সত্য।
সংগঠনের পক্ষে আবুদাবি সফরের সময় আমি ফরহাদকে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে দেখেছি। প্রথম মিনিটেই তিনি আমাদেরকে আপন করে নিয়েছিলেন। সময় দিয়েছেন। কথা বলেছেন। সম্মানিত করেছেন। বুঝাই যাচ্ছিল সহজ-সরল সুন্দর মনের একজন অতি আধুনিক মননশীলতার অধিকারী এই প্রিয় ভাই ফরহাদ হুসাইন।
ফরহাদ হুসাইন একজন কবি, লেখক ও সাহিত্য সংগঠক। তিনি ‘কলম একাডেমি লন্ডন’ সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার উপদেষ্টা।
ফরহাদের লেখা আমি নিয়মিত দেখি। তাঁর লেখার বিষয়বস্তু, ধরণ, ধারণা, চিন্তা বা চেতনা আলাদা। তিনি এমন কিছু বিষয় নিয়ে লিখেন যা অনেক বড় বড় লেখক কবিরা চিন্তা করেন না।
তিনি মূলত: সামাজিক বৈষম্য, অসঙ্গতি এবং সমসাময়িক সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে লিখে থাকেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশার ‘মসিচিত্র’ নিয়ে তাঁর প্রকাশিত লেখা উল্লেখ করার মত।
তাঁর “উপদ্রুত উপকূলের কান্না” বইটির পান্ডুলিপি আমি পড়েছি। বইটির পাতায় পাতায় দেশের দুঃখ-কষ্ট, মানুষের ব্যথা বেদনা, সমাজের সমস্যা সার্থকভাবে তুলে ধরেছেন। উদীয়মান কবি এবং সমাজ চিন্তক একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজ রাস্ট্র ও বিশ্বের যুদ্ধবিগ্রহের করুণ কাহিনী তুলি ধরতে পেরেছেন তিনি। সমাজে বিদ্যমান বিভেদ,অবিচার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব ও তার বিপরিতে একটি সাম্যসমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অন্তরের আকুতি পাঠক অনুভব করবেন অনায়াসে। তিনি শব্দ দিয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মানবের না বলা কথা বলেছেন।
আমি মনে করি এই বইটি বাংলাদেশের সমাজ চিত্র তথা বৈশ্বিক অবক্ষয়ের জটিল বাস্তবতার ঐতিহাসিক সাক্ষী। প্রতিটি সচেতন নাগরিকের প্রয়োজন এই বইটি সংগ্রহ করা।
বাংলা একাডেমির মাধ্যমে বইটি বাংলাদেশের সকল উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে পাঠাবার ব্যবস্থা করা উচিত। আমাদের আগামী প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসায় এ বইটির উপর আলোচনা সেমিনার করা সময়ের দাবি। এতে জাতির কল্যাণ হবে। মানুষ সচেতন হবে।
এরকম মূল্যবান একটি বই লেখার জন্য আমি লেখক ফরহাদ ভাইকে অভিনন্দন জানাই।
বইটির ভূমিকা লিখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
অবারিত অভিরাম শুভেচ্ছা তাঁর জন্য। বিশ্বের প্রয়োজনে
আশা করি তিনি নিয়মিত লিখবেন।
দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁর কলমে আরো শক্তি দেন। তাঁর নামের সকল সত্যতা নিয়ে তিনি যেন বিশ্বের কল্যাণের কারণ হয়।
🌱
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাবিবী,
বি এ (অনার্স), এম এ (ডবল),
ইসলামিক ফিলোসফি (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি)।
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ‘কলম একাডেমি লন্ডন’।