অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে স্কুল ত্যাগ করে মাদ্রাসায় এসে ছিলো নাহীদ। যদিও প্রথমে সে মাদ্রাসাতেই লেখাপড়া করতো। হঠাৎ একদিন শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ছেড়ে ছিলো ইলমে দ্বীন শেখা। সে মাদ্রাসায় পড়বে নাতো আর পড়বেই না। যতই বুঝাই ফলাফল শূন্য। এদিকে জনম দুখীনী মায়ের চোখের পানি দেখে কে!
উঠতে বসতে সর্বাস্থায় তাকে শুধু কাঁদতেই দেখা যেতো। তিনি বলতেন আহারে! কত শখ করে আমি আমার ছেলেটাকে মাদ্রাসায় দিয়ে ছিলাম, ইচ্ছেছিলো আমি মরলে পরে জানাজার নামাজের ঈমামতি করবে সে । আমার সেই স্বপ্ন বুঝি আর এ জীবনে কখনও পূর্ণ হবে না। কী দোষ করে ছিলাম আমি! যেই কারণে সে মাদ্রাসার লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে!
তাফসীর মাহফিলে হুজুরদের মুখে শুনে ছিলাম নিজের সন্তান জানাজার নামাজ পড়ালে কবরে নাকি আজাব হয় না। দয়াময় আল্লাহ্ তায়ালা ছেলের ঈমামতির উছিলায় মাফ করে দেন। আমি এখন কিভাবে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবো!
দিন রাত ছেলে নাহীদকে বুঝাতে থাকি, বাবা তুমি আমার মনের আশাটা পূর্ণ করো।
আমি যদি দেখে যেতে পারি যে, তুমি আলেম হয়েছো তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো।
না,কে শুনে কার কথা। সে এখন বাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পড়ে না নামাজ,করে না রোজা। লাগামহীনভাবে চলছে তো চলছেই।
ওর কোন বন্ধুর শল্লায় পড়ে একদিন ঘরে এসে বলতেছে যে, আমি হাই স্কুল পড়বো আমাকে ভর্তি করিয়ে দাও। আমি তো শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলাম। ওরে আমরা বলি মাদ্রাসায় পড়তে ও মাদ্রাসায় না পড়ে স্কুলে পড়বে! কত বড় সাহস ওর।
শেষ পযর্ন্ত আমাদের অবাধ্য হয়েই স্কুলে গিয়ে ভর্তি হলো তো শান্ত হলো। মাত্র কয়েকমাস পড়েই ঘরে এসে বলতেছে এই স্কুল ভালো লাগে না সে এখন অন্যখানে ভর্তি হবে। নতুন স্কুলে ভর্তি করানো হলো। সেখানে ভর্তি হয়ে মাত্র এক বছর পড়ালেখার পর আবারো বন্ধ করে দিল স্কুলে যাওয়া।
কী রে এখন কি করবে শুনি? মা আমি আবারো মাদ্রাসায় যেতে চাই? মাদ্রাসায়? তুই পড়বে মাদ্রাসায়? হ্যাঁ মা পড়বো। সত্যিই এবার পড়বো ইনশাআল্লাহ। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলি আয় আল্লাহ্, এবার বুঝি আমার মনের আশা পূর্ণ হবে। আহ! আমার এত দিনের স্বপ্ন বুঝি আজ সত্যিই পূরণ হতে যাচ্ছে।
আমি প্রথমে ওর কথা বিশ্বাস করি নাই।
কারণ মাদ্রাসায় পড়াতে চেষ্টার তো কোনো কমতি করি নাই আমি।
তখন তো একবার ও হ্যাঁ বলেনি! এখন কেন হঠাৎ করে নিজ থেকেই আবার রাজী হয়ে গেলো। ব্যপারটি ছিলো বড়ই অদ্ভুত!
ওর বাবা কিছুতেই আর রাজী হলো না।
আমি পাশের বাড়ির এক হুজুরের সঙ্গে কথা বলে গোপনে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেই।
ওর বাবা জানতে পেয়ে কিছুদিন রাগারাগি করে এই বলে যে, ওরে কেন মাদ্রাসায় দিয়েছ আবার? সে কী পড়বে কখনও? শুধু শুধু টাকা আর সময়টা নষ্ট করবে।
পড়ার ইচ্ছে থাকলে প্রথমেই পড়তো। যে পাখি উড়াল দিবে বাসায় থাকতেই বুঝা যায়।
এভাবে উদাহরণ দিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তায় তিনি বলতেন আমাকে।
আমি এসব শুনেও উনাকে কিছু বলতাম না।
মনে মনে আল্লাহ্ পাকের দরবারে অশ্রুঝরা চোখে শুধু দোয়া করতাম আর বলতাম হে আল্লাহ্- তুমি আমার ছেলেটাকে আলেম করে ঘরে ফিরিয়ে দিয়ো এবার যেনো আমার স্বপ্নটা পূর্ণ হয় মালিক।
আলহামদুলিল্লাহ্ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ্ অবশেষে দেখতে পেলাম সত্যিই ছেলে আমার পড়াশোনায় বেশ মনযোগ দিয়েছে। এই অভাগা দুখিনী মায়ের স্বপ্ন পূর্ণ করে ঠিকই একদিন আলেম হয়ে ঘরে ফিরে এসেছে।
দয়াময় আল্লাহ্ পাক চাইলে তিনি কি না করতে পারেন।
ওর আলেম হওয়ার পিছনে এ সবই যে মহান রবের অনুগ্রহ।
কবুল করলে আল্লাহ্ পাকে
শয়তান তারে যতই ডাকে
করতে বিপদগামী,
লাভ হবে না কোনোদিনই
দয়া যদি করেন তিনি
শ্রেষ্ঠ কল্যাণকামী।
প্রভুর কাছে শোকর শত
করি সেজদায় মাথা নত
করবো জীবন ভরে,
দুখী মায়ের দোয়া কভু
ফিরিয়ে যে দেননি প্রভু
নিলেন কবুল করে।
বিজয়নগর বি বাড়িয়া
পেশ ইমাম ওমান।
<p>সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি:মোস্তাক আহমেদ, সম্পাদক:আতিকুল ইসলাম সোহাগ, নির্বাহী সম্পাদক: উমর ফারুক শাবুল, বার্তা সম্পাদক:মোঃ শরিফ উদ্দিন, সম্পাদক (+8801711-462641), নির্বাহী সম্পাদক (+8801727241310), বার্তা সম্পাদক(+8801750025347)<br><br></p>
© All rights reserved 2022 habiganjerkantho.com