রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হবিগঞ্জ জেলার সিরাতুন্নবী (সা:) আলোচনা সভা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক সাহিত্য অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি উপলক্ষে বাংলা সাহিত্য পরিষদ ইউকে এর উদ্যোগে আনন্দ সভা ও সাহিত্য আলোচনা অনুষ্ঠিত প্রবাসী লেখক শেখ হুমায়ুন আহমেদ এর সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল নবীগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর সীরাতুন্নবী মাহফিল অনুষ্ঠিত দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী হাবিবুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা:) – মোফতাহিদা খানম রাখী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান কে চুনারুঘাট সাংবাদিক কল্যান সংস্থার সংবর্ধনা কলম একাডেমি লন্ডন এর ব্যবস্থাপনায় নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কারার ঐ লৌহকপাট – দেওয়ান জুলফিকার হাসনাত শৈশব স্মৃতি – মোফতাহিদা খানম রাখী

১৫ আগস্ট ১৯৭৫: কেন সেদিন প্রতিরোধ হলো না

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২, ৩.২১ পিএম
  • ১৪৮ বার পঠিত

এর আগে আরেকটি বই লিখেছিলেন প্রয়াত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল হামিদ (অব.)। তিনি ওই সময় ঢাকা সেনানিবাসে স্টেশন কমান্ডার ছিলেন। আমি তখন একজন তরুণ কর্মকর্তা হিসেবে যা দেখেছি, উপলব্ধি করে ওই সময়কার সেনাবাহিনী এবং ওই দিনকার ঘটনার বর্ণনা, যতটুকু স্মৃতিতে ছিল লিখেছি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম) নির্দেশে সেখানে তোলা ছবির ফিল্ম জব্দ করতে ১৫ আগস্ট সকালে আমি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়েছিলাম। সেই বাড়িতে গিয়ে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা আমাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। ওই সময় অনেকগুলো প্রশ্ন আমার মনে জেগেছিল এবং আমার বইয়ে তা তুলে ধরেছি। দীর্ঘদিন পর আমার সেই বইটিকে পরিবর্ধিত আকারে আবার নতুন নামে (রক্তঝরা দিনগুলি: ১৯৭৫-৮১, প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতায় পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থানের বিবরণ) প্রকাশ করতে যাচ্ছে প্রথমা প্রকাশন।

ওই দুটি বই প্রকাশের পর অনেক বছর কেটে গেছে। আমার সব প্রশ্নের উত্তর তেমন পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু পেয়েছি। এগুলো পেয়েছি, ওই সময়কার সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে কিছু কর্মকর্তার লেখা বই পড়ে।

তাঁদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) সফিউল্লাহ বীর উত্তম, ওই সময়কার সেনাপ্রধান, তখনকার ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার প্রয়াত কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম, ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন বীর বিক্রম ও লে. কর্নেল (অব.) প্রয়াত আনোয়ারুল আলম শহীদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আনোয়ারুল আলম ওই সময় রক্ষীবাহিনীর পরিচালক পদে ঢাকায় অবস্থান করতেন। উল্লেখ্য, ওই সময় ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডে আমিও কর্মরত ছিলাম

আমার বইয়ে প্রধানত দুটি প্রশ্ন তুলেছি, যার একটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা কয়েক বছর ধরেই তুলে ধরছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কেন ওই দিন কোনো প্রতিবাদ করেননি? এমনকি তারপরও না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো এর উত্তর পাবেন না।

আবার পেতেও পারেন। তবে আমার জানামতে ‘বঙ্গবীর’ হিসেবে পরিচিত আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম সশস্ত্র প্রতিরোধের লক্ষ্য নিয়ে সীমান্ত পার হয়েছিলেন। অপর দিকে বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ প্রতিবাদ করেছিলেন, যাঁদের বিষয় আমার উল্লেখিত বইয়ে রয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে আনোয়ারুল আলম শহীদের রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। ওই বইয়ে তিনি লিখেছিলেন যে তিনিও চেষ্টা করে কোনো নেতার সমর্থন পাননি। এ প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই পীড়া দেয়, যার বহিঃপ্রকাশ তিনি রাখঢাক ব্যতিরেকে করেছেন।

যাহোক, আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল যে এত বড় রক্ষীবাহিনী, যাদের বেশির ভাগ স্বাধীনতাযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাও রাজনৈতিক কর্মীদের মতো হাওয়ায় উবে গেলেন? কোনো প্রতিরোধ এমনকি প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি! অবশ্য রক্ষীবাহিনীর এ ভূমিকার কারণ ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন আনোয়ারুল আলম শহীদ, কিন্তু আমার কাছে ব্যাখ্যা যৌক্তিক মনে হয়নি।

তিনিও উল্লেখ করেছেন যে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে অন্যান্য শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অথচ রক্ষীবাহিনী তোফায়েল আহমেদকে হেডকোয়ার্টারে বেশিক্ষণ রাখতে সাহস পায়নি। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা রক্ষীবাহিনী কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।

শেষ প্রশ্ন ছিল এ ঘটনায় পুরো সেনাবাহিনী যুক্ত ছিল না, এরপরও কেন হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া গেল না? মাত্র কিছুদিন আগে ওই সময়কার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ, যিনি পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন, তাঁর অপারগতার কথা নানাভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তবে সরাসরি নিজের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার কথা বলেননি।

বঙ্গবন্ধু আক্রান্ত হওয়ার পর কে আগে যোগাযোগ করেছিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যায়। তবে ওই সময় জানা গিয়েছিল যে বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ করায় তিনি বলেছিলেন যে বঙ্গবন্ধু যেন পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যান এবং তিনি দেখছেন কী করা যায়। তিনি ওই সময় কোনো ব্যবস্থা নিতে ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডারকে বলেছিলেন কি না, ব্রিগেডের কেউ জানতে পারেননি। তাঁর কথা, তাঁর অধস্তন কমান্ডার না শুনলে সেনা আইনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা সেনাপ্রধানকে দেওয়া আছে। অথচ তিনি ওই দিন রেডিও থেকে ফিরে বেশ কয়েক ঘণ্টা ব্রিগেড সদরেই ছিলেন।

আমি সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় দেখেছি। কেউ কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে পারছিলেন না। অথচ ঘাতক মেজরের দল সশরীর সেনানিবাসে এসে থেকে তাদের সিদ্ধান্ত জ্যেষ্ঠদের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছিল। কেন এমন হলো? মাত্র তো কিছু মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে দেশের ক্ষমতা দখল করেছিলেন? এর কারণ চিহ্নিত করতে বেশি বেগ পেতে হয় না। আমি কিছুটা বিশ্লেষণ করেছিলাম, যা আমার বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সংক্ষেপে তা-ই ১৫ আগস্ট বিবিসি বাংলায় তুলে ধরেছিলাম; যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরছি।

ভারত ও পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কিছু নয়। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিল প্রচলিত পাকিস্তানি কমান্ডের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর করার মধ্য দিয়ে। দেশ স্বাধীন করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল প্রচলিত কমান্ড চ্যানেলের বাইরে। এরপর অনেক দিন ব্যক্তিপর্যায়ে কমান্ড তৈরি হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল, যার মধ্য থেকে বয়সে তরুণ তিনজন সামনে চলে আসেন। এর কারণও রয়েছে।

আরও পড়ুন

যুদ্ধ শুরু হওয়ার বেশ কয়েক মাস পর কেন্দ্রীয় কমান্ড তৈরি হলেও জিয়া-সফিউল্লাহ-খালেদ ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিজেদের বলয় তৈরি করেন। যার জের স্বাধীনতা-উত্তরকালেও বজায় ছিল।

স্বাধীনতা-উত্তর সেনাবাহিনীতে শুধু মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা বিভাজনই ছিল না, এই তিনজনের মধ্যেও বিভাজন ছিল। ওই সময়ের এই তিন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের মধ্যে তেমন সখ্য ছিল না। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ৩ এবং ৭ নভেম্বরের ঘটনা।

তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহসহ অন্যদের অনভিজ্ঞতা এবং কমান্ড ব্যবস্থার যে শিথিলতা দৃশ্যমান ছিল এবং এ কারণেই পরবর্তী পাঁচ বছরে ছোট-বড় ২২টি অভ্যুত্থান তথা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। দুজন রাষ্ট্রপতি নিহত হন।

অভিজ্ঞতা কম হলেও যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং সাফল্য অর্জন করা যায়। বিশেষ করে গেরিলা কায়দার মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু শান্তিকালীন একটি সেনাবাহিনী বা অন্য বাহিনী পুনর্গঠন এবং পরিচালনা করা বেশ কঠিন কাজ।

বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ভাবধারার সদস্যদের নিয়ে। এত বিভাজন নিয়ে একটি অনভিজ্ঞ কমান্ড কাঠামোর মধ্যে সেনাসদস্যদের পরিচালনা যেমন কঠিন, তেমনি আপৎকালে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতারও অভাব দেখা দেয়, যেমনটি হয়েছিল আগস্ট ১৫, ১৯৭৫-এ। এসব কথা এখন খোদ কে এম সফিউল্লাহ তাঁর বই ফিফটিনথ আগস্ট এ ন্যাশনাল ট্র্যাজেডিতে উল্লেখ করেছেন।

অনেকে প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই সেনাপ্রধান যদি অ্যাকশন নিতে পারতেন, তাতে কী হতো? ওই দিনই যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত, হয়তো হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক নেতৃত্বও সাহস পেত এবং কিছু রক্তপাত হলেও পরবর্তী রক্তপাতের ধারা রোধ করা যেত। তবে এসব চিন্তা এখন ইতিহাসের ‘যদি’। তারপরও বলতে হয়, এই যদি ভবিষ্যতের শিক্ষণীয় হতে পারে।

  • ড. এম সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচন বিশ্লেষক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং এসআইপিজির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো (এনএসইউ)

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

<img src=”https://habiganjerkantho.com/wp-content/uploads/2023/12/WhatsApp-Image-2023-12-18-at-8.56.22-PM.jpeg” alt=”” width=”100%” height=”auto” class=”alignnone size-full wp-image-1526″ />

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2022 habiganjerkantho.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com